অভি পাল
স্বপ্ন যত বড় হয়, লড়াইটাও তত কঠিন হয়। কক্সবাজারের খরুশকুল পালপাড়ার মেয়ে প্রিয়ন্তি পাল সেই কঠিন লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে নিজের মেধা, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে। বাবার ছোট মুদির দোকানের সীমিত আয়ের মধ্যে থেকেও সে থেমে থাকেনি, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে করেছে নিরলস পরিশ্রম। আর সেই পরিশ্রমের ফল—এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে মেধাক্রম ৩৯১ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে মেধাক্রম ৪৯ অর্জন।
প্রিয়ন্তির বাবার আয় খুব বেশি ছিল না, কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার জন্য তিনি সব সময় চেষ্টা করেছেন সেরা সুযোগ করে দিতে। কোচিং করেছে, প্রয়োজনীয় বই কিনেছে, কিন্তু প্রতিটি খরচই ছিল সংসারের জন্য বড় চাপ। সেই চাপে দমে না গিয়ে প্রিয়ন্তি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোট প্রিয়ন্তি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। পাশাপাশি গান গাইত, স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিত। তবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন তার কাছে সবচেয়ে বড় ছিল। কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শুরু হয় কঠোর পরিশ্রম। নিয়মিত কোচিং, বই সংগ্রহ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা—এক মুহূর্তের জন্যও দিকভ্রান্ত হয়নি সে।
সাফল্য নিয়ে প্রিয়ন্তি বলে, "স্বপ্ন পূরণ সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও না। আমি জানতাম, প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, তাই আমাকে নিজের জায়গা নিজেকেই তৈরি করতে হবে। বাবা-মা সবসময় সাহস দিয়েছেন, শিক্ষকরাও পাশে ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমি নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।"
ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে চায় প্রিয়ন্তি। তার ইচ্ছে, এমন একটি অবস্থানে পৌঁছানো, যেখানে সে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে পারবে, বিশেষ করে যারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে।
তার গল্প শুধুই ব্যক্তিগত সাফল্যের নয়, এটি প্রতিটি সংগ্রামী শিক্ষার্থীর গল্প, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বপ্ন দেখে এবং তা বাস্তবে পরিণত করতে কঠোর পরিশ্রম করে। প্রিয়ন্তির সাফল্য প্রমাণ করে, মনোবল আর অধ্যবসায় থাকলে যেকোনো সীমাবদ্ধতাকে জয় করা সম্ভব।