অভি পাল
মহেশখালী পানের জন্য সুপরিচিত একটি অঞ্চল, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে পান চাষীরা নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। মহেশখালীর পান দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদাসম্পন্ন, এবং এখানকার পান চাষীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলো তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। তবে আজ মহেশখালী পানের বাজারে যে অবস্থা, তা যেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো। চাষীরা তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, ব্যবসায়ীরা একেবারে ক্ষতির মুখে। এত বছর ধরে যার জন্য তারা ঘাম ঝরিয়েছেন, আজ সেই পণ্যের দাম এতটাই কমে গেছে, যে তারা নিজের পুঁজি উদ্ধার করতে পারছেন না।
চাষী মোহাম্মদ আলী, যিনি ১৫ বছর ধরে পান চাষ করছেন, তার হতাশা ফুটে ওঠে, "একসময় আমাদের পান ছিলো স্বপ্নের মতো, কিন্তু এখন তা শুধু কষ্টের নাম। আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করি, কিন্তু সেই পরিশ্রমের ফল তো পাচ্ছি না। বাজারে পান বিক্রি করলেই মনে হয় যেন আমাদের পরিশ্রম, সময়, সব কিছুই বৃথা। এক সময়ে যে দাম আমরা পেতাম, আজ তা পাচ্ছি না, আর আমাদের জীবন আর চলছেও না।"
এমন পরিস্থিতিতে চাষীরা ঋণের বোঝা নিয়ে আরও বেশি দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের সব কিছুই যেন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। এক সময়ে যেই পান তাদের জীবিকা ছিল, আজ সেটি তাদের পরিবারের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাষী আবুল হোসেন বলেন, "আমরা তো জানতাম না, আমাদের এত বছরের পরিশ্রম একদিন এমনভাবে মূল্যহীন হয়ে যাবে। আমরা ঋণ শোধ করতে পারছি না, সংসার চালাতে পারছি না, আর কিছুই আমাদের হাতে নেই।"
ব্যবসায়ীরা আরও হতাশ। তারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক মাস ধরে পানের দাম নেমে গেছে ব্যাপকভাবে। একদিকে তাদের পুঁজি হারাচ্ছে, অন্যদিকে তারা বিক্রির পরও কিছুই পাচ্ছেন না। ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, "আমরা যদি এমন অবস্থা ফেস করি, তাহলে আমাদের তো আর কিছুই থাকবে না। প্রতিদিন বিক্রির পর যা কিছু পাই, তা দিয়ে সংসারও চালাতে পারি না। পানের দাম এত কমে গেছে যে আমাদের পুঁজি একেবারে তলানিতে চলে গেছে।"
এটা শুধু ব্যবসায়ীদেরই সমস্যা নয়, বরং পুরো মহেশখালীর পান চাষী সম্প্রদায়ের জন্য এক গভীর সংকটের মুখ। চাষীরা তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, কিন্তু তাও কোনো উপকার হচ্ছেনা। একজন চাষী তার জমি বিক্রি করতে গিয়ে বলেন, "আমাদের কী করার আছে? যদি দাম না বাড়ে, আমাদের জীবন তো তছনছ হয়ে যাবে। জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি, কিন্তু তাও কিছু হচ্ছে না। আমাদের আশার আলো কোথাও নেই।"
এছাড়া, অনেক চাষী এখন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, "আমরা যদি এমন পরিস্থিতি আরো কয়েক মাস ধরে কাটাতে পারি, তবে আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব হবে না। আমরা শুধু চাই, একটু ন্যায্য দাম, যাতে আমরা আমাদের পরিশ্রমের সঠিক ফল পেতে পারি।"
এখন চাষী ও ব্যবসায়ীদের জন্য একমাত্র আশা—পান চাষের বাজারে যদি সঠিক মূল্য ফিরে আসে, তবে তাদের জীবিকা বাঁচানো সম্ভব হবে। কিন্তু এখন, তারা জানেন না, কবে তা ঘটবে। তাদের চোখের জল মুছতে মুছতে জীবনের এই কঠিন লড়াই চলছে, আর তারা বারবার একই প্রশ্ন করছেন, "এটা কখন শেষ হবে? কবে আমাদের পরিশ্রমের মূল্য ফিরে পাবো?"
মহেশখালীর পান চাষীরা এখন এক অন্ধকার যুগে ডুবে আছেন, যেখানে তাদের সামনে কোনো আলোর ছোঁয়া নেই। তাদের জীবনের সবকিছু যেন ভেঙে পড়েছে, আর তারা কেবল একটিই প্রার্থনা করছেন—তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য ফিরিয়ে দেওয়া হোক, যাতে তারা আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন।
মহেশখালী পান চাষীরা এবং ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য ফিরে পাওয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তারা সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করেছেন, যেন পান চাষের সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং তাদের জন্য সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। তাদের দাবি, পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন এবং তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তারা সরকারের কাছে আশু সহায়তা এবং সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন, যাতে তারা আবার স্বাবলম্বী হতে পারেন এবং তাদের পরিবারকে সুস্থভাবে চলতে দিতে পারেন।