চবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশের উপকূল এখন আরও নিরাপদ হতে চলেছে—কারণ এবার ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা আসবে সরাসরি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চবিতে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক ‘ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন’, যার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের ৭২ ঘণ্টা আগেই সতর্কতা দেওয়া সম্ভব হবে।
এই ব্যতিক্রমী ও দূরদর্শী প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০ কোটি টাকার প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম দিচ্ছে চীনের সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অব ওশানোগ্রাফি (SIO)। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে এ স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ।
গ্রাউন্ড স্টেশনটি চীনের HY-1SI/D এবং FY-4B স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এই উপগ্রহগুলো বঙ্গোপসাগরের ওপর নজরদারি চালাবে এবং সরাসরি তথ্য পাঠাবে স্টেশনে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বাতাসের গতি, মেঘের গতিপথ ও সমুদ্রের স্রোতের বিশ্লেষণ করে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে বদলে দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ডেটার জন্য বিদেশি সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে এই স্টেশন একটি স্বাধীন, নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী সমাধান দেবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “চবি শুধুমাত্র শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে না, এবার দেশের নিরাপত্তা, গবেষণা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক হয়ে উঠছে। এই প্রকল্প চবিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মেরিন ডেটা হাবে পরিণত করবে।”
সমুদ্রবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেলিম বলেন, “স্টেশনটি চালু হলে গবেষণায় এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারবে, যা দেশের জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখবে।”
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন সময়ে চবিতে এই স্টেশন স্থাপন নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত।