অভি পাল:আজকের সকালটা আর পাঁচটা দিনের মতো নয়। মোরগ ডাকার আগেই যেন বাতাসে ভেসে এসেছে গাঁদা, বেলি আর ‘বিউফুল’ ফুলের গন্ধ। বাংলাদেশের সনাতনী পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে এক স্বর্গীয় দৃশ্য—ঘর নয়, যেন ফুল-পাতা আর বিশ্বাসে মোড়ানো এক জীবন্ত মন্দির।
‘বিউফুল’ নামের গোলাপি-হালকা বেগুনি ছায়ার ফুলটা এবার ঘরসজ্জায় এনেছে নতুন মাত্রা। কারো কলসির মাথায়, কারো তোরণে, আবার কারো আলপনার চারপাশে জ্বলজ্বল করছে এই সুন্দর রঙিন ফুল।
নিমপাতা, আমপাতা দিয়ে বানানো দরজার তোরণ, জানালায় কাগজের ঝালর, আর উঠোনে আঁকা বাহারি আলপনা—সব মিলিয়ে ঘরের প্রতিটা কোণ যেন কথা বলছে আদি-অন্তহীন সংস্কৃতির কথা।
শুধু শহর নয়, গ্রামবাংলাও আজ পাল্লা দিয়ে সাজছে। বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট ছোট গেট, তার ওপর বিউফুল ফুল আর নিমপাতা দিয়ে তৈরি আড়ং। মনে হয়, বাংলার প্রতিটি ঘর আজ নিজেই একেকটা শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছে। ছোট-বড় সবাই যেন ফিরে গেছে নিজ শিকড়ে, নিজ বিশ্বাসে।
এ এক চুপচাপ বিপ্লব—রঙের, গন্ধের, ঐতিহ্যের। ঘরের বাইরে যেমন রঙিন সাজ, তেমনি ঘরের ভেতরেও এক অনন্য আবহ—ভক্তি, ভালবাসা আর শান্তির।
আজকের দিনে সনাতনী সমাজ শুধু ঘর সাজায়নি, সাজিয়েছে নিজের পরিচয়, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ইতিহাস।
এই সাজ নয় শুধু চোখের, এই সাজ আত্মার।
এই আলো শুধু বাহিরে নয়, জ্বলে উঠেছে অন্তরে।
বাংলা আজ গর্ব করে বলতে পারে—
“আমরা হারিয়ে যাইনি, আমরা রয়েছি, আমরা জেগে আছি—ফুলে, পাতায়, উৎসবে"