প্রবাল ভট্টাচার্য :খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল আজ। ৮৮ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমালেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটির 'Casa Santa Marta'-তে সকালেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩০ কোটি ক্যাথলিক বিশ্বাসীর আত্মিক নেতা ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন শারীরিক নানা জটিলতায়—ডাবল নিউমোনিয়া ও কিডনি জটিলতা ছিল প্রধান।
পোপ ফ্রান্সিসের পার্থিব নাম ছিল জর্জ মারিও বার্গোলিও। আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে জন্মগ্রহণকারী এই ধর্মগুরু ২০১৩ সালে ইতিহাস গড়েছিলেন—প্রথম লাতিন আমেরিকান, প্রথম যাজুইট ও প্রায় ১৩০০ বছরের মধ্যে প্রথম নন-ইউরোপীয় পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
তার নেতৃত্বে ক্যাথলিক চার্চ পেয়েছিল এক মানবিক ও প্রগতিশীল কণ্ঠস্বর। তিনি শুধু ধর্মীয় উপদেশ দেননি, বরং সাম্য, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু সুরক্ষা ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন দৃঢ় অবস্থানে।
তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছেন নির্দ্বিধায়, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, এবং আদিবাসী নিপীড়নের ঘটনায় গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন—যা ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এক সাহসী অবস্থান হিসেবে ধরা হয়।
প্রয়াণের মাত্র একদিন আগেই, ২০ এপ্রিল, তিনি সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় তার শেষ ইস্টার বার্তা ও আশীর্বাদ দেন। আজ সেই আশীর্বাদ যেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক অব্যক্ত শূন্যতায়।
পোপের মৃত্যুতে ভ্যাটিকানে শুরু হয়েছে "Sede Vacante"—পোপের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই ‘কনক্লেভ’ বসবে, যেখানে গোপন ভোটে নির্বাচিত হবেন নতুন পোপ।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক নেতারা শোকবার্তা জানাচ্ছেন। কিং চার্লস জানিয়েছেন, “তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ আমার হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে।” জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুকে "বিশ্বের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি" হিসেবে বর্ণনা করছেন।