অভি পাল:চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না—এটা দেশের অন্যতম বড় হাসপাতাল! চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ তলার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকলেই গা ঘিনঘিন করে ওঠে। যেন কোনো পরিত্যক্ত ভবন, কিংবা আবর্জনার ভাগাড়। দেয়ালে ধুলা জমে পুরু স্তর, ফ্লোরে জমে থাকা ময়লা, প্রতিটি কোনায় দুর্গন্ধের আস্তানা। এখানে চিকিৎসা নয়, বরং নতুন রোগ নিয়ে ফিরে যাওয়ার ভয়!
ওয়ার্ডের মেঝে দিনের পর দিন পরিষ্কার হয় না। বাথরুমে ঢুকা তো দূরের কথা, সামনেই দাঁড়ানো যায় না দুর্গন্ধে। নোংরা পানি জমে আছে, স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার ভয় প্রতিটি পদক্ষেপে। মশা-মাছি উড়ে বেড়ায় এমনভাবে, যেন ওরাই এই ওয়ার্ডের আসল বাসিন্দা। রোগীর খাওয়ার থালা রাখা হচ্ছে ময়লার পাশেই—স্বাস্থ্যবিধির এমন লঙ্ঘন মেনে নেওয়া যায় না।
একজন রোগীর স্বজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “রোগীকে ভালো করতে এনেছিলাম, এখন ভয় হচ্ছে এখান থেকে সুস্থ না হয়ে আরও খারাপ হয়ে যাবে।” আরেকজন রোগী ক্ষোভে বলেন, “এটা কি হাসপাতাল? মানুষের জীবন নিয়ে এমন খেলা হচ্ছে কেন?” বহু রোগীর অভিযোগ—নার্স বা ওয়ার্ড বয় ডাকলেও সাড়া পাওয়া যায় না। রোগীকে পরিষ্কার করাও যেন স্বজনদের একমাত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালের এমন চিত্র দেখে প্রশ্ন জাগে—এ কেমন স্বাস্থ্যসেবা? সরকার যখন স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের কথা বলছে, তখন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের এমন করুণ চিত্র সত্যিই হতবাক করে দেয়। কোথায় প্রশাসনের তদারকি? নিয়মিত পরিষ্কার না হলে, রুগ্ন পরিবেশে চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ওয়ার্ডের ছবি ও ভিডিও ইতোমধ্যে জনমনে চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকে লিখেছেন, “চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু ডেকে আনার নাম চট্টগ্রাম মেডিকেল?” কেউ কেউ আবার এ অবস্থা দেখে প্রশ্ন তুলেছেন, “এত বড় হাসপাতালের দেখভালের দায়িত্ব কী শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ?”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ভরসার জায়গা। সেই স্থানের এমন রুগ্ন চেহারা মেনে নেওয়া যায় না। জনস্বার্থে অবিলম্বে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রোগীবান্ধব করার জোর দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা হোক জীবনের আশ্রয়স্থল, রোগের উৎস নয়।