অভি পাল:-চট্টগ্রামের ব্যস্ত রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি, বাজার, পার্ক, এমনকি হাসপাতালের সামনেও চোখে পড়ে এক অভিন্ন দৃশ্য—ভিক্ষুকের দল! সকাল গড়িয়ে দুপুর, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত—প্রতিটি সময়ে নগরবাসীর পিছু নেয় এদের কেউ না কেউ। কেউ কানে করুণ স্বরে ফিসফিস করে, কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে, কেউ বা পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়ে। এই দৃশ্য এখন এতটাই সাধারণ হয়ে গেছে যে, চট্টগ্রাম শহর যেন পরিণত হয়েছে এক ‘ভিক্ষার জনপদে’।
নগরের নিউমার্কেট, চকবাজার, রেলস্টেশন, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত কোথাও রক্ষা নেই। কিছু কিছু এলাকায় তো দোকান খোলার আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকে ৪-৫ জন ভিক্ষুক। ক্রেতা বা পথচারী একটু দাঁড়ালেই ঘিরে ধরে তারা। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ পকেটে হাত দিতে না দিতেই গায়ে হাত পড়ে যায়, কেউ হয়তো কাঁদতে কাঁদতে এমনভাবে দাঁড়ায়, যেন টাকা না দিলে পাপ হয়ে যাবে!
নগরবাসীর ধারণা, এটি কেবল আর্থিক অসচ্ছলতার চিত্র নয়, বরং একটি সুসংগঠিত চক্রের ব্যবসা। অনেক ভিক্ষুকের পেছনে রয়েছে ‘ভিক্ষা মাফিয়া’, যারা অসহায় মানুষদের দিয়ে দিনে হাজার হাজার টাকা আদায় করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা তুলে রাত শেষে জমা দেয় নিয়ন্ত্রকদের হাতে। আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট জায়গা বা রুটে বসে থাকার জন্য ‘ভাড়া’ দেয়। অথচ প্রশাসন এসব জানে, দেখেও কিছু করে না—এই নীরবতা এখনই ভাঙা দরকার।
শুধু ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নয়, এই ভিক্ষুকদের অনেকেই আজ পথচারীদের জন্য নিরাপত্তার হুমকি। কেউ কেউ ছদ্মবেশে পকেটমার, কেউবা মোবাইল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। নারী ও শিশুরাও এই ব্যবসার ‘চাল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেউ পঙ্গু সেজে, কেউ চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে করুণার অভিনয় করে। কিন্তু দিনের শেষে তারা চলে যায় অন্যরকম আয়োজনে।
শহরের এমন চিত্র দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পর্যটক, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, এমনকি বয়স্করাও প্রতিনিয়ত এই ভিক্ষাবৃত্তির সম্মুখীন হয়ে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ ও অসহায় বোধ করছেন। এক কলেজছাত্রী বলেন, “প্রতিদিন বাসে উঠলেই কয়েকজন ভিক্ষুক উঠে পড়ে। কেউ শরীরে হাত দেয়, কেউ মুখের ওপর থুথু ফেলে দেয়—এই শহর কি সত্যিই নিরাপদ?”
এখন সময় এসেছে প্রশাসনকে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার। শুধু ফাইলপত্রে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না—বাস্তবে দৃশ্যমান ব্যবস্থা চাই। প্রতিটি ওয়ার্ড, বাজার ও ব্যস্ত এলাকায় নিয়মিত টহল, টাস্কফোর্স ও অভিযানের মাধ্যমে ভিক্ষুক চক্রকে চিহ্নিত করতে হবে। পুনর্বাসন কেন্দ্রকে কার্যকর করতে হবে, আর যারা পেছন থেকে এই ভিক্ষাবৃত্তিকে চালাচ্ছে—তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে এই ভিক্ষা-সন্ত্রাস থামবে না, বরং শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেবে।