রিমন মালকার :-এ যেন বোয়ালখালীবাসীর স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা! দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অসংখ্য দাবি আর আন্দোলনের ফল অবশেষে হাতে ধরা দিয়েছে। কর্ণফুলীর বুকে আজ স্থাপিত হলো নতুন কালুরঘাট রেল-সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর—যা শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জীবনে আশার নতুন দিগন্ত।
বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে ভার্চুয়ালি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
প্রায় ১১.৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। প্রস্থ ৩১.৯৫ মিটার। সেতুটি হবে দ্বৈত কাঠামোর—উপর দিয়ে চলবে যানবাহন, নিচ দিয়ে ট্রেন। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৯ সালের মধ্যে, আর সেতুটি খুলে দেওয়া হবে ২০৩০ সালের দিকে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬,৫৪০ কোটি টাকা।
বর্তমানে ব্যবহৃত পুরনো কালুরঘাট সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৩১ সালে। ২০১১ সালেই তার আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। নতুন সেতু নির্মাণের ফলে বোয়ালখালী, পটিয়া ও বাঁশখালীর লক্ষাধিক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।
ভিত্তিপ্রস্তরের ফলকে নিজের নাম না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবারও আলোচনায় এলেন উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। "কাজের চেয়ে বড় কিছু নয়,"—এই বক্তব্যে তিনি বুঝিয়ে দিলেন উন্নয়ন রাজনীতি নয়, মানবসেবাই তাঁর মূল ব্রত। এই অনাড়ম্বর সিদ্ধান্ত জনমনে প্রশংসার ঝড় তুলেছে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরপরই বোয়ালখালীজুড়ে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ হয়। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। “আমরা তো ভাবিইনি বেঁচে থাকতে এটা দেখতে পারব,” বললেন স্থানীয় এক প্রবীণ। কেউ কেউ কর্ণফুলীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সেতুর স্থানে তাকিয়ে কেঁদে ফেলেন।
এই সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। একদিকে যেমন যাতায়াত হবে সময় ও খরচ সাশ্রয়ী, অন্যদিকে খুলে যাবে সম্ভাবনার দরজা।