রিমন মালাকার: ভক্তি, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির অপূর্ব এক মিলনমেলায় পরিণত হয় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ মধ্যম সর্দ্দার পাড়ায় অবস্থিত শ্রী শ্রী জোড় মা ও লোকনাথ সেবাশ্রম। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত এই আয়োজন শুধু সেবাশ্রম নয়, বরং পুরো হাবিলাসদ্বীপ অঞ্চলের মানুষকে ছুঁয়ে যায় আনন্দ আর গৌরবের অনুভবে।
এবছর সেবাশ্রম পদার্পণ করেছে তার অষ্টম বর্ষে। এই শুভ উপলক্ষে ২৫ জুন আয়োজিত হয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই আশ্রম চত্বর ছিল ভক্ত, দর্শনার্থী, শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের পদচারণায় মুখরিত। সুর, ভক্তি, আলো ও আতিথেয়তার এক অপূর্ব সমন্বয়ে পালিত হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
দিনভর আয়োজনে ছিল মহাপ্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা, মাহাত্ম্য বর্ণনা, এবং দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত শতাধিক সাধু-সন্ন্যাসীর অংশগ্রহণে সাধু-সঙ্গ ও আখণ্ড কীর্তন। দেশ-বিদেশের ভক্তরাও যোগ দেন এই মহোৎসবে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিল আলোকসজ্জা, ধূপধুনোর গন্ধ ও ভক্তির আবেশ।
সাধু সঙ্গ সম্মেলনে যারা উপস্থিতি ছিলেন-
শ্রীমৎ স্বামী অজপানন্দ ব্রক্ষচারী মহারাজ,শ্রী ডালিম বড়ুয়া ব্রক্ষচারী,শ্রী হরিকৃপানান্দ ব্রক্ষচারী,শ্রী পরিতোষানন্দ ব্রক্ষচারী,শ্রী মাধবচাঁদ ব্রক্ষচারী
শ্রী রণনাথ ব্রক্ষচারী,শ্রী মহেশ্বরানন্দ ব্রক্ষচারী
শ্রী কৃষ্ণানানন্দ ব্রক্ষচারী,শ্রী হৃদয়মনি মা,শ্রী রিগান দাস বাবাজী,শ্রী রাজীবনন্দ ব্রক্ষচারী,শ্রী গোপাল মহারাজ এছাড়া আরো বিভিন্ন মঠ মন্দির থেকে আগত সাধু সন্ন্যাসী রয়েছে।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক ও সংগীত সন্ধ্যা, যেখানে মঞ্চে সুরের জাদু ছড়ান একঝাঁক গুণী শিল্পী। গানে মুগ্ধ করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী গীতা পাঠক, চন্ডী পাঠক, শ্রীমতি অপর্ণা দেবনাথ। লোকবাদ্যে প্রাণ জোগান সংগীতপাগলা শ্রী বিজয় সরদার (বাংলা ঢোল), ইউকুল (ক্ষুদ্র বাদক), অর্ঘ পাল (বাঁশি), মৃদুল দামা (মৃদঙ্গ), রনি আর্চায্য (অক্টোপ্যাড), রুবেল ঘোষ (কী বোর্ড) এবং হরি দাশ (মঞ্জুরী)। পুরো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন হিমেল বর্ধন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ সেবক শ্রী রিমন সর্দ্দার। তাঁর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় সফল ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয় এই মহাযজ্ঞ।
গীতা পাঠক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা ও সমাজসেবায় নিবেদিত ব্যক্তিত্ব শ্রী বাবলু রুদ্র এবং শিক্ষা অনুরাগী শ্রী শীমান বসাক।
এই আয়োজন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না—এ ছিল এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সামাজিক সংহতির উৎসব, যা স্থানীয় ইতিহাসে দীর্ঘকাল মনে রাখার মতো একটি দিন হয়ে থাকবে