অভি পাল:‘‘দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় আগে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি পাহাড়ের বারুদগন্ধী বাতাসকে নির্মল করে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছে। এই চুক্তি কেবল কাগজের কোনো দলিল নয়, এটি পার্বত্য জনপদের আর্থসামাজিক মুক্তির সনদ এবং সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এক সময় যেখানে ভীতি ও অস্থিরতা ছিল নিত্যসঙ্গী, চুক্তির ফলেই আজ সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও পর্যটনে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। পাহাড়ের এই উন্নয়নের ধারা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে আমাদের সকলকে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’’ ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে আনন্দঘন পরিবেশে দিবসটি উদযাপিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা পরিষদ চত্বরে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই।
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক থানজামা লুসাই আরও বলেন, ‘‘সরকারের আন্তরিকতায় পাহাড়ি-বাঙালি ভেদাভেদ ভুলে আমরা আজ এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছি। এই শান্তির ধারা অব্যাহত থাকলে বান্দরবান হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।’’ জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এস, এম, হাসান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বান্দরবান সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ (পিএসসি)। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।’’ এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব জিনিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান রিজিয়নের জিএসও-২ (ইন্ট) মেজর পারভেজ রায়হান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মুহাঃ আবুল মনসুর, নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব পরাক্রম চাকমা এবং বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি জনাব আমিনুল ইসলাম বাচ্চু। বক্তাদের আলোচনা শেষে দুপুর ১২টায় স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, যেখানে গান ও নাচের ছন্দে পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। জেলা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, ন্যস্ত বিভাগের প্রধানগণ, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।