“সাংবাদিক নয়, স’ন্ত্রা’সী! চট্টগ্রামে আইনজীবীর র’ক্তে রঞ্জিত মে দিবস”

আমাদের দিগন্ত প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকদের হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছেন দুই যুবক। কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মিলনে আনোয়ারার পার্কি বিচে যাবার সময় পিটিয়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে দেয়া হয় তাদের। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে ওয়াসা মোড় এলাকায় এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন দুই যুবক। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম জেলা জর্জ আদালতের আইনজীবী। অন্যজন টমটম চালক।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, জমিয়ুল ফালাহ মসজিদের সামনের রাস্তায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাড়া করা কয়েকটি মিনিবাস অপেক্ষা করছিলো । মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েকজন ব্যক্তি গাড়ি চালানো নিষেধ বলে গাড়ির চাবি নিয়ে যায়। মসজিদের মাঠে জড়ো হওয়া সাংবাদিকরা আনন্দ আয়োজনে বিএনপি -জামাতপন্থী সাংবাদিকরা বাধা দিচ্ছে ভেবে লাঠিসোঁটা নিয়ে মুলক সড়কে এসে শহিদ নামের এক ছেলেকে ধরে পেটাতে থাকে। রাস্তার অপরপ্রান্তে মোটর সাইকেল যোগে আইনজীবীদের সমাবেশে যোগ দিতে যাবার সময় এডভোকেট রেজাউল ইসলাম নামের এক আইনজীবী হট্টগোল দেখে এগিয়ে যান। উত্তেজিত সাংবাদিকরা তাকেও বেধড়ক পেটাতে থাকে। ঘটনাস্থলে খুলশি থাকার পুলিশ এসে আহত দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

পরে পুলিশ জানতে পারে বাসের চাবি নেয়াকে কেন্দ্র করে মারধর করা হয়েছে দুজনকে। এরমধ্যে রেজাউল ইসলাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা। চট্টগ্রামের একাধিক সমন্বয়ক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আহত আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ সড়কে হঠাৎ করে হট্টগোল দেখে ওখানে যাবার সাথে সাথে মসজিদের পেছনে থাকা সাংবাদিক নামধারী দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। আমি আসলে আইনজীবী সমিতির সমাবেশে যাচ্ছিলাম। শহিদকে ( নাম পরে জেনেছি) মারধরের কারণ জানতে চাওয়া কাল হয়েছে। পথচারীদের ধারন করা মোবাইল ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে মারধরের চিত্র। মে দিবসে শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে নিরুৎসাহিত করার রীতি আছে। কেউ তাদের পিকনিকের গাড়ির চাবি নিয়ে গেছে দাবি করে দুজনকে মারা হলো। আমরা একে অপর চিনিও না। পরে জানতে পারলাম ইচ্ছে করেই হামলা করা হয়েছে। সাংবাদিক সাইনবোর্ডের আড়ালে সবাই ফ্যাসিবাদের দোসর, রাজনৈতিক কর্মী। ওখানকার কয়েকজন খালেদা জিয়ার উপর হামলার মতো মামলার আইনজীবী এবং জুলাইয়ের রাজপথের যোদ্ধা হিসেবে আমাকে চিনে ফেলে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফাইল আইনজীবী আমি। প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। ‘

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণহত্যায় উষ্কানি ও ছাত্রদের পুলিশ ভ্যানে তুলে দেবার মতো কয়েকটি ঘটনায় ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সাংবাদিক ইউনিয়নকে চাঙ্গা করতে মাঠে নামেন ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। তিনি একই সাথে আওয়ামী লীগের পেশাজীবি পরিষদের নেতা। কোতোয়ালী আসন থেকে গেল জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

জানতে চাইলে খুলশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব আহমেদ বলেন, তথ্য প্রমাণ যাচাই করে দুজনের কাউকে কোন ধরনের বেআইনি কাজের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা যায় নি। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিবের সাথে কথা বলে জিম্মায় দেয়া হয়েছে। মারধরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অভিযোগ দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘

আহত আইনজীবীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে থাকা শহিদকে রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, এনসিপি ( পশ্চিমাঞ্চল) সংগঠক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ গণ অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী, ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো নানা ফরম্যাটে, নানা কায়দা আস্ফালন দেখাচ্ছে। যে আইনজীবীকে মারা হয়েছে তাকে আমি ও রাফি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি আমাদের সহযোদ্ধা। ‘

আওয়ামী লীগ পন্থী সাংবাদিকরা দুই পথচারীকে মারধর করে মিনিবাস যোগে আনোয়ারার পার্কি বিচে তাদের পূর্ব নির্ধারিত সম্মিলনে যোগ দিতে গেলে সেখানে জনতার বাধার মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে সেখান থেকে সরে পতেঙ্গা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে ভুঁড়ি ভোজ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (আ.) সভাপতি রিয়াজ হায়দার, সাধারণ সম্পাদক সভুর শুভ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়ক কামাল উদ্দিন, ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান সালাউদ্দিন রেজা, যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান শহিদুল্লাহ শাহরিয়ার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ( আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সহ সভাপতি শহিদুল আলম, চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতেখার, সিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল বড়ুয়া, প্রদীপ শীল, রঞ্জিত কুমার শীল, রাজেশ চক্রবর্তী, পার্থ প্রতিম নন্দী, বিপ্লব পার্থসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।