অভি পাল:-চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এখন যেন আর মার্কেট নয়, হকারদের রাজত্বে পরিণত এক আতঙ্কের রাজ্য। এখানে কেউ পথ চলতে পারে না নিশ্চিন্তে, কেউ জিনিস দেখতে পারে না স্বাধীনভাবে, কেউ কথা বলতে পারে না প্রতিবাদ করে—কারণ আপনি যদি একবার মুখ খোলেন, তাহলে হকারদের একটি গোটা দল আপনাকে ঘিরে ধরবে, চোখ রাঙাবে, হুমকি দেবে, এমনকি গায়ে হাত তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না।
ফুটপাত নামের যে জায়গাটি জনগণের হেঁটে চলার জন্য বরাদ্দ, তা এখন হকারদের ব্যবসা সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। দোকান থেকে বেশি দাপট হকারদের—তাদের টানাটানি, জোর করে কিছু ধরিয়ে দেওয়া, মুখের ওপর ঠেলে দেওয়া—সবকিছু এমনভাবে হয় যেন আপনি বাধ্য তাদের কাছ থেকে কিছু কিনতে। কেউ যদি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, “দরকার নেই ভাই”—তাহলেই ভ্রু কুঁচকে উঠে কয়েক জোড়া চোখ, ঠোঁটে ঝাঁঝালো কথা, আর শুরু হয়ে যায় অপমানের ঝড়।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা। অভিযোগ রয়েছে, কিছু হকার ইচ্ছা করে গায়ে ধাক্কা দেয়, অশালীন মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়, এমনকি ফোনে ভিডিও করার ভয় দেখায়। শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু না বলে দ্রুত এলাকা ছাড়ে, কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর চড়াও হয় কয়েকজন মিলে। এই ঘটনাগুলো ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, যেন এসব ঘটাই নিউমার্কেটের নিয়ম।
আর এই পুরো কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেট। কে কোথায় বসবে, কে কোন দামে বিক্রি করবে, কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার হবে—সবই যেন কোনো অদৃশ্য নীতিমালায় চলে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়, তবে তা যেন লোক দেখানো। কয়েক ঘণ্টা বা একদিনের মধ্যেই সব কিছু আগের জায়গায় ফিরে আসে, হকারেরা আবার দখল নেয় ফুটপাথ, আবার শুরু হয় আগের সেই একই তাণ্ডব।
পথচারীরা হতবাক, কাস্টমাররা অসহায়, নারী-শিশুরা আতঙ্কিত। অথচ যারা এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার কথা, তারা চুপ। অনেকেই বলছে, “এই জায়গায় নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।” অথচ এটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার। যেখানে মানুষ পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসে, সেখানে এই ধরনের চড়াও মনোভাব, গালাগালি আর ইভটিজিংয়ের ঘটনাগুলো একটি সভ্য সমাজের চেহারায় কালি লাগিয়ে দেয়।
চট্টগ্রামের নিউমার্কেট যেন এখন আর কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং এক অসহায়তার চিত্রনাট্য, যেখানে মানুষ নয়, শাসন করে হকারদের ভয়। আর প্রশাসনের এই নিরবতা যেন সেই ভয়কে আরও গভীর করে তোলে।
এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে এখনই প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। লোক দেখানো অভিযান নয়, চাই স্থায়ী সমাধান—যেখানে ফুটপাত পথচারীর, আর ক্রেতা থাকবে সম্মানিত। হকারদের অবাধ আচরণ, গায়ে হাত তোলা, ইভটিজিং এবং সিন্ডিকেটের রাজত্ব—সবকিছুর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। না হলে নিউমার্কেটের মতো জনগণের প্রাণকেন্দ্র একদিন জনরোষের আগুনে জ্বলে উঠবে, যার দায় প্রশাসন এড়াতে পারবে না। এখনই সময়, কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার।