“গৌতম বুদ্ধ: এক পৃথিবী বদলে দেওয়া যুগের মহান পুরুষ!”

দুর্জয় বড়ুয়া: ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটেনি তখনও। পাহাড়ে হালকা কুয়াশা, চারপাশে পাখির ডাক—আর ঠিক তখনই মাইনী ভ্যালি মুখর হয়ে ওঠে ধর্মীয় গান আর বুদ্ধের বাণীতে। দীঘিনালায় বুদ্ধ পূর্ণিমার সকাল শুরু হয় এমনই এক পবিত্র উন্মাদনায়।

পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশের উদ্যোগে বেলুন উড়িয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। কেউ হাতে পতাকা, কেউ আবার ছোট ছোট বাচ্চাকে নিয়ে বিহারমুখী। এক হাতে প্রদীপ, আরেক হাতে প্রার্থনা—আলাদা এক ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়ে পুরো জনপদে।

শোভাযাত্রা শেষ, কিন্তু দিন তো তখনও শুরু।
জেলার নয়টি উপজেলার শতাধিক বৌদ্ধ বিহারে তখন জেগে ওঠে পুণ্য কর্ম। কোথাও সংঘদান চলছে, কোথাও পিণ্ডদান। অষ্টপরিষ্কার দান আর প্রদীপ প্রজ্বলনে ব্যস্ত ভক্তরা। ধর্মদেশনায় ভেসে যাচ্ছে পবিত্র বিহারগুলো।

এখানেই থেমে নেই আয়োজন।
হাসপাতালের রোগীদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত খাবার, দেওয়া হয় সামান্য কিছু সহায়তা। কারও চোখে জল, কারও চোখে শান্তির প্রশান্তি। উৎসব শুধু বিহারে না, ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হৃদয়ে।

সন্ধ্যা হতেই বিহারগুলো যেন আলোয় ভাসে। পঞ্চশীল গ্রহণ, প্রবজ্যা, প্রদীপ পূজা আর সেই বহু প্রতীক্ষিত ফানুস উড়ানো—সব মিলিয়ে একটা পরিপূর্ণতা।

এদিনটি তো আর সাদামাটা দিন নয়।
এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ, পেয়েছিলেন বোধি, আবার এই দিনেই চিরবিদায়। জন্ম, বুদ্ধত্ব, মহাপরিনির্বাণ—তিনটাই এক দিনে, তাই বুদ্ধ পূর্ণিমা শুধু উৎসব নয়, বাঁচার দর্শন।

পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লৌকমিত্র থেরো বলেন— “ভগবান বুদ্ধের বাণী যদি মানুষ অন্তরে নেয়, তাহলে যুদ্ধ থামবে, হানাহানি কমবে। আজ আমরা সকলে একসাথে শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। হোক সকল প্রাণের মঙ্গল।”