অভি পাল:-চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেট এলাকা—যেখানে জনজীবনের প্রতিদিনের পথচলা ছিল এক চরম পরীক্ষার নাম। ফুটপাত ছিল কেবল নামেই, বাস্তবে সেখানে ছিল ভ্রাম্যমাণ দোকান, পসরা সাজানো হকার আর অসহনীয় জটলা। পথচারীদের হাঁটতে হতো রাস্তায় নেমে, আর রিকশা-সিএনজি চলাচল হতো গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েই। এই বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটাতে অবশেষে দৃশ্যপটে অবতীর্ণ হলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
আজ সকালে চসিকের উদ্যোগে, মেয়রের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উপস্থিতিতে শুরু হয় ঐতিহাসিক দখলদার উচ্ছেদ অভিযান। নিউমার্কেট মোড়, কে সি দে রোড, সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন ফুটপাতসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চলে কঠোর অভিযান। সিটি কর্পোরেশনের কর্মী, পুলিশের দল এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে চলে এই অপারেশন।
“চট্টগ্রাম শহরকে আধুনিক ও চলনযোগ্য রাখতে হলে আমাদের আগে রাস্তাঘাট এবং ফুটপাতকে দখলমুক্ত করতে হবে। ফুটপাত পথচারীর, দোকানদারের নয়,”—অভিযান চলাকালীন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তার এই দৃঢ় অবস্থানে বেশিরভাগ নগরবাসী যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। “এতদিন পর বুঝলাম, মেয়র আছেন মাঠে! আমরা এতদিন শুধু ভোট দিতাম, আজ ফলও দেখছি,”—হাসিমুখে বললেন এক বৃদ্ধ পথচারী।
অভিযান চলাকালীন দেখা যায়, অনেক দোকানি নিজের দোকান নিজেই সরিয়ে নিচ্ছেন মেয়রের সামনে। কেউ কেউ কাঁদছেন, কেউ দাঁড়িয়ে শুধু তাকিয়ে আছেন। “সত্যি কথা বললে, আমরা জানতাম এই দিন আসবে। কিন্তু কেউ কখনো সাহস করে উঠত না। মেয়র সাহেব করেই ফেললেন!”—বললেন এক চায়ের দোকানি, যার ভ্রাম্যমাণ দোকান আজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তবে মানবিক জায়গাটিও বিবেচনায় রাখছেন মেয়র। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব হকার প্রকৃত হতদরিদ্র এবং জীবিকার একমাত্র উৎস হিসেবে ফুটপাতে বসতেন, তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। “আমরা কাউকে অনাহারে ফেলতে চাই না, তবে নিয়ম ভেঙে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করতেও দেব না,”—বলেছেন এক চসিক কর্মকর্তা।
এদিকে নিউমার্কেট এলাকার পরিবেশে ইতিমধ্যে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। পথচারীরা হাঁটছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, কোনো ঠেলাঠেলি নেই, যানজটে কষ্ট নেই। “আজ অনেকদিন পর মনে হচ্ছে আমি সত্যিকার চট্টগ্রামে হাঁটছি,”—আনন্দিত কণ্ঠে জানালেন কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রী।