চট্টগ্রাম মেডিকেল: দুর্নী*তির আখড়া, হয়*রানির শিকার সাধারণ রোগীরা

অভি পাল

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) শুধু চট্টগ্রামের নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য শেষ ভরসার জায়গা। কিন্তু বাস্তবে এই হাসপাতাল যেন এক ভয়াবহ দুর্নীতি, দালালচক্র আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা থাকলেও, টাকা ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। রোগীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে প্রবেশের পর থেকেই প্রতিটি ধাপে ঘুষ, হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়।

সরকারি হাসপাতালের প্রধান লক্ষ্য দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের কম খরচে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া, কিন্তু এখানে ঠিক উল্টো চিত্র। অভিযোগ রয়েছে, বিনামূল্যের ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী এবং এমনকি রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা খাবার পর্যন্ত চুরি হয়ে বাইরে বিক্রি হয়। ফলে গরিব রোগীরা বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনতে বাধ্য হন। জরুরি বিভাগেও একই অবস্থা। অনেক রোগীকে ঠিকমতো দেখা হয় না, আর যদি কাউকে দেখা হয়, তবে তা হয় ঘুষের বিনিময়ে। চিকিৎসকেরা সরকারি দায়িত্ব পালন করার বদলে ব্যক্তিগত চেম্বারেই বেশি সময় দেন। ফলে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, তবু কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পাওয়া যায় না।

দালালদের দৌরাত্ম্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের প্রতিটি কর্নারে দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। তারা অসহায় রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়, যেখানে চিকিৎসার খরচ কয়েকগুণ বেশি। অথচ সরকারি হাসপাতালে কম খরচে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও, এই দালালদের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।

এখানকার ক্লিনার ও নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের জন্য টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে দ্রুত কাজ হয়, না হলে রোগীর পরিবেশ আরও নোংরা রাখা হয়। আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালনের বদলে অনেক সময় রোগীদের হয়রানি করে থাকেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সাধারণ মানুষের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দুর্নীতিগ্রস্ত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দালালদের দমন করে হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের টাকায় পরিচালিত এই হাসপাতালকে সাধারণ মানুষের জন্য সত্যিকারের আশ্রয়স্থল করে তুলতে এখনই প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ।