অভি পাল(চট্টগ্রাম): চট্টগ্রাম শহরের হৃদস্পন্দন এক অদ্ভুতভাবে স্তব্ধ হয়ে গেছে ঈদুল ফিতরের আগমনে। বড় বড় সড়কগুলো, ব্যস্ত মার্কেট, হেঁটে চলা মানুষের জটলা—সব কিছুই যেন থমকে গেছে। চোখে পড়ছে না সেই চিরচেনা চিত্র, যেখানে রাস্তায় মানুষের ভিড়, গাড়ির হর্ণ, বাজারের ব্যস্ততা—সবই ছিলো নিত্যদিনের অংশ। কিন্তু এই ঈদে, শহরের চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। এক অদ্ভুত শান্তি, এক নিরবতা ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি কোণায়। শহরের অধিকাংশ মানুষ, যারা বছরের পর বছর কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করেন, এই ঈদ উপলক্ষে তাদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে গেছেন গ্রামে।
সকালে সূর্য ওঠার আগে থেকেই নগরীর রাস্তাঘাট ছিল শূন্য। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় যেমন জামালখান, মোমিন রোড, স্টেশন রোড—এসব স্থানে একসময় যা ছিলো রাশি রাশি মানুষের ভিড়, তা এখন যেন এক বিরাট শূন্যতার কাছে হার মেনে গেছে। অফিস, স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান—সবই বন্ধ, অথচ শহর তার এক নিস্তব্ধ রূপে ধীরে ধীরে ঈদের ছুটির আনন্দে মুগ্ধ হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে শুরু করে ছোট ছোট গলি, রাস্তা—সবখানেই যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, তা আসলে চট্টগ্রামের ‘আধুনিক’ রূপ থেকে অনেকটা দূরে। মার্কেটগুলো এবং দোকানপাটগুলো বন্ধ থাকলেও, কিছু ছোট ব্যবসায়ী নিজেদের দোকান খোলা রেখেছেন, তবে এখানে ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম। কাঁচাবাজারে রোজকার চিত্র আর দেখা যায় না; সেখানেও যেন এক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দোকানে বসে থাকা মালিকরা শুধু অপেক্ষা করছেন ঈদের পরবর্তী সময়ে আবার কর্মমুখী মানুষের ফিরে আসার জন্য।
এই শহরে সাধারণত এমন দৃশ্য দেখা যায় না। তবে ঈদের সময় শহরের মানুষের এই গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে। চট্টগ্রামের মানুষ ঈদে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়ে একেবারে গ্রামের পরিবেশে মেতে ওঠে। ছুটির দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পিঠেপুলি, সুয়াবিহীন পরিবেশে একযোগে ঈদ উদযাপন যেন তাদের কাছে এক অপরিহার্য আনন্দ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ‘শূন্য’ শহর এক ধরনের বিশ্রাম ও প্রশান্তির উপহার হিসেবে কাজ করে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শহরের নাগরিকরা সবাই সুকনিষ্ঠভাবে অপেক্ষা করছেন ঈদ শেষে শহরের ব্যস্ত জীবন ফিরে আসার জন্য। শহরের শান্ত পরিবেশের এই বিরতি সাময়িক। ঈদের পর, কর্মজীবী মানুষদের আবার ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে শহর ফের গতিশীল হয়ে উঠবে। সড়কগুলো আবার পূর্ণ হবে মানুষের হাঁটার শব্দে, দোকানগুলোতে ফিরে আসবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক, এবং শপিংমলগুলো আবার পূর্ণ হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, এই নিস্তব্ধতা শহরের নানান কোণায় একটা নীরব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে কোনো কোলাহল নেই, কোনো তাড়াহুড়ো নেই। এই সময়টাতে, চট্টগ্রাম যেন এক অন্যরকম রূপে রূপান্তরিত হয়, যা প্রাত্যহিক জীবনের ক্লান্তি থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়।
ঈদ পরবর্তী সময়ে এই নিঃসঙ্গ পরিবেশ যেন ফিকে হয়ে যাবে, কারণ চট্টগ্রামের মানুষের ফিরতে থাকা, এবং শহরের গতিশীলতা এক নতুন চেহারা ধারণ করবে। তবে, ঈদের এই শান্তি এবং ছুটির পরবর্তী সময়ের উৎসবের জন্য শহরের স্নিগ্ধতা অনেকেই মনে রাখবেন।