“এক সময় গর্ব ছিল, আজ লজ্জার নাম-পতনের মুখে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়”

অভি পাল:যে স্কুল একসময় ছিল অভিভাবকদের আশা, শিক্ষার্থীদের গর্ব আর এলাকাবাসীর ভরসার নাম— যে প্রতিষ্ঠানের নাম শুনলেই গর্বে বুক ভরে উঠত— সেই বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় আজ যেন নিজেকেই লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখে কেঁপে উঠেছে পুরো বাঁশখালী। ফলাফলের কাগজ হাতে পাওয়ার পর কেউই যেন বিশ্বাস করতে পারেনি— যে বিদ্যালয় একসময় জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের গড়ার কারখানা ছিল, আজ সেই স্কুলেই অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে!

এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয় ২২১ জন শিক্ষার্থী। পাশ করেছে মাত্র ১১৮ জন। পাশের হার ৫৩.৩৯ শতাংশ।যদিও জিপিএ–৫ পেয়েছে ১১ জন। উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যালয়টির অবস্থান হয়েছে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০তম।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিভাবকদের মাঝে দেখা দেয় চরম হতাশা ও ক্ষোভ। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে ওঠে দীর্ঘশ্বাস, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় একের পর এক প্রশ্নবাণ। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “শুধু নামটাই এখন স্কুল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে—ভিতরে নেই না পড়াশোনা, না জবাবদিহি।”

একজন সাবেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, “আমরা যখন পড়তাম, তখন এই স্কুল থেকে বোর্ডে নাম উঠত। আজ নিজের পরিচয় দিতেই লজ্জা লাগে।”

অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে নেই সঠিক পাঠদানের পরিবেশ, শিক্ষকদের মধ্যে আগ্রহের অভাব প্রকট। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না, কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে অবহেলা করছে। ছাত্রছাত্রীরাও স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে হয়ে পড়েছে কোচিংনির্ভর।

বিদ্যালয়ের এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠান ছিল বাঁশখালীর ইতিহাসের অংশ। এর পতন মানে শুধু একটা স্কুলের নয়—এটা পুরো এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, দায়ীদের জবাবদিহি এবং ফলাফল পর্যালোচনার দাবি তুলেছেন।

তাদের মতে, বিদ্যালয়টি তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে এখনই প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা। শিক্ষক–শিক্ষার্থী সম্পর্ক মজবুত করা, নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং, উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনের সরাসরি নজরদারি ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

বাঁশখালীর শিক্ষা মানচিত্রে একসময় যেখান থেকে আলো ছড়াত, এখন সেই স্থানই যেন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে হারিয়ে যাবে শুধু একটি বিদ্যালয় নয়—একটি এলাকার সম্ভাবনা, একটি প্রজন্মের স্বপ্ন।