বাঁশখালীতে “স্বপ্নে রাঙা মঞ্চে উঠল শিশুদের কণ্ঠস্বর-‘আমরাও পারি, আমরাই আগামী!’”

অভি পাল:সেই সকালটা যেন ছিল না অন্য দিনের মতো—চারদিকে পাহাড় ঘেরা সবুজ নীরবতা, হঠাৎ করেই ভেঙে দিল একঝাঁক শিশুর কণ্ঠস্বর। কেউ গাইছে হৃদয়ের গভীর থেকে, কেউ নাচছে ছন্দে ছন্দে, কেউ তুলির টানে এঁকে ফেলছে নিজের কল্পনার বাংলাদেশ। বাঁশখালীর গুনাহগরি যেন তিন দিন পরিণত হয়েছিল এক স্বপ্নময় শিল্পলোক—যেখানে প্রতিটি শিশুই হয়ে উঠেছিল একেকজন গায়ক, চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী কিংবা যুক্তিবাদী বক্তা।

পাহাড়-জঙ্গল ছাপিয়ে যেন বেজে উঠেছিল প্রতিভার এক গর্জন। বাঁশখালীর গুনাহগরি তখন আর কেবল পাহাড়ি জনপদ নয়—সে হয়ে উঠেছিল সৃষ্টিশীলতার এক জীবন্ত উপত্যকা!

১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল, গুনাহগরি দিশারি ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় মধ্য দক্ষিণ বাংলাদেশ ও পার্বত্য জেলা শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন “কালচারাল কো-কারিকুলাম প্রতিযোগিতা”, যেখানে অংশ নেয় ৮টি প্রকল্পের ১৪০ জন শিশু।

এই তিন দিন শুধু প্রতিযোগিতা নয়, ছিল আবিষ্কারের—নিজেকে খোঁজার, সাহস দেখানোর, আর মঞ্চে উঠে বলার যে, “আমিও পারি!”

কম্পেশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহযোগিতায়, পিডিএ সংস্থার বাস্তবায়নে এবং রুবেল নাথের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্গারেট কলি মালাকার, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, কম্পেশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পাস্টর অজয় মিত্র (চেয়ারম্যান, সল্ট বাংলাদেশ), জয়বাহাদুর ত্রিপুরা (চেয়ারম্যান, আগাপে বান্দরবান), এবং যোনাচন্দ্র ত্রিপুরা (পিডিএ কো-অর্ডিনেটর, আগাপে)।

গান, নাচ, বিতর্ক, কুইজ, অঙ্কন—যেন প্রতিটি পরিবেশনায় ঝরে পড়েছে শিশুদের আবেগ আর স্বপ্ন। তাদের চোখে ছিল দীপ্তি, কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাস, আর মনের গভীরে ছিল দেশকে জানার ও ভালোবাসার আগ্রহ।৮টি প্রকল্পের শিশুদের মধ্যে ছিল সাহস, শ্রদ্ধা, আর এক মনের শক্তি।

একেকটি গান ছিল চিরন্তন দেশপ্রেমের সুর,নৃত্য ছিল নতুন দিগন্তের পায়ের ছাপ।কুইজ, বিতর্ক—এটা ছিল দেশের ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।

কালুরঘাট, বিলছরি, সাগরিকা,  হায়দারনাশী মালুমঘাট , বাণীগ্রাম,আকিরামপাড়া , মিরসরাই এই ৮টি প্রকল্প যেন হয়ে উঠেছিল ৮টি প্রদীপ, যা আলোকিত করছিল ভবিষ্যতের পথ।

প্রতিযোগিতা শেষে অতিথিরা,  বিচারক প্রমোদ দাশ ও তন্দ্রা তান্তি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরস্কার নয়, সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের গল্পটা বলা, নিজের স্বপ্নটা তুলে ধরা।

গুনাগরির পাহাড়ের বুক জুড়ে এই তিন দিন গুঞ্জরিত হয়েছে একটাই বাণী—“এই শিশুরাই আগামীদিনের বাংলাদেশ গড়বে।” আর এই আয়োজন ছিল তাদের সেই যাত্রার প্রথম ধ্বনি।

শেষ দিন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল গুনাহগরির পাহাড়ের পেছনে, আর শিশুরা ফিরছিল নতুন স্বপ্ন নিয়ে।পাহাড় তখনো দাঁড়িয়ে, হয়তো মনে মনে বলছিল—“আজ আমি একটা জাতির নতুন ভোর দেখেছি।”