“পতেঙ্গা বাঁচাও—অ’ভিযান হাস্যকর, দ’খলদার ভ’য়ংকর!”

অভি পাল:চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত আজ আর আগের মতো নয়। সৈকতের প্রতিটি কোণায় চোখে পড়ে শত শত অবৈধ দোকান। পর্যটকদের জন্য যে স্থানটি হওয়ার কথা ছিল নিরাপদ ও নির্মল, সেখানে এখন প্রতিদিন ঘটছে জুলুম, চাঁদাবাজি, এমনকি সংঘর্ষ ও খুনাখুনির মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা।

দর্শনার্থীরা অভিযোগ করছেন, সৈকতে ও সৈকতের উপরে হাঁটার জায়গা নেই। যেখানে-সেখানে দোকান বসানো হয়েছে, পলিথিনে ঢাকা, ময়লায় ভরা, সৌন্দর্য লোপাট! দোকানদারদের অনেকেই ব্যবহার করেন চরম দুর্ব্যবহার, কেউ প্রতিবাদ করলে গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। সন্ধ্যার পর সৈকত রূপ নেয় এক ভয়ানক জায়গায়—মাদক, চুরি, ছিনতাই, বখাটেদের উৎপাত যেন নিত্যদিনের চিত্র।

লোক দেখানো অভিযান হয় মাঝে মাঝে।দেখানো হয় দু-একটা ছাউনি ভাঙা, কিছু দোকান তুলে দেওয়া। প্রশাসনের ক্যামেরায় চলে চমৎকার দৃশ্য—কিন্তু কয়েকদিন পরেই একই জায়গায় আবার দোকান, আবার দখল। যেন একটা নাটক চলছে—জনগণের সামনে দেখানোর, বাস্তবে কিছুই বদলায় না।

স্থানীয়রা বলছেন, এ অবৈধ দোকানগুলোর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া। তারা নিয়মিত চাঁদা দেয়, সুরক্ষা পায়, আর প্রশাসন চোখ বুজে থাকে।

প্রশ্ন জাগে—এই পতেঙ্গা কি আর সাধারণ মানুষের জন্য? নাকি কিছু দখলদার আর সন্ত্রাসীদের ব্যক্তিগত আখড়া হয়ে উঠেছে? একটা জাতীয় পর্যটনকেন্দ্র যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ ঘুরতে আসে, সেই জায়গা কি এমন অনিরাপদ, অপরিচ্ছন্ন, আর বিশৃঙ্খল হতে পারে?

দর্শনার্থীরা আজ ক্ষুব্ধ, স্থানীয়রা হতাশ। তারা বলছে—“আমাদের সৈকত আমরা চাই, অবৈধ দখল নয়। আমরা চাই নির্বিঘ্নে হাঁটতে, পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে। আমরা চাই না যেন দোকানদারদের হুমকি, মাদকসেবীদের উৎপাত, কিংবা রক্তাক্ত মারামারির খবর প্রতিদিন শুনতে হয়।”

প্রশাসনেরও এবার জবাবদিহির সময় এসেছে। লোক দেখানো অভিযান নয়, প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান। দরকার কঠোর পদক্ষেপ, দরকার নজরদারি, দরকার এমন অভিযান—যা সত্যিকারের উচ্ছেদ নিয়ে আসবে, শুধু ফেসবুক পোস্ট নয়।

পতেঙ্গা সৈকত সাধারণ মানুষের, এর সৌন্দর্য, এর নিঃশ্বাস, এর ঢেউ কারো চাঁদাবাজির ফাঁদে আটকে থাকতে পারে না। সৈকতের প্রতিটি বালুকণায় লেখা রয়েছে মানুষের ভালবাসা—সেটা অপমানিত হতে পারে না দখলদারদের পায়ের দাপটে।