নদীতে ফুল, মনে উৎসব-দীঘিনালায় পাহাড়িরা স্বপ্ন ছুঁয়ে শুরু করল নতুন বছর

দুর্জয় বড়ুয়া ( প্রতিবেদক, দীঘিনালা)

আকাশ জুড়ে ছিল সকালের সোনালি রোদ, আর মাটিতে হাজারো হৃদয়ের প্রার্থনা—পুরনো সব ক্লান্তি আর কষ্ট ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে দীঘিনালার মাইনী নদীতে ফুলে ফুলে শুরু হলো পাহাড়ের প্রাণের উৎসব, ফুল বিজু।

চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে রঙিন পুষ্প, চোখে স্বপ্ন, আর মনে অগাধ শ্রদ্ধা—গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে তাঁরা প্রার্থনা জানালেন সকলের মঙ্গল, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ওমর ফারুক ও তাঁর সহধর্মিণীর উপস্থিতিতে মাইনী নদীর ব্রীজঘাটে হাজারো মানুষ অংশ নেন এই পবিত্র আয়োজনে। বৈসাবি উৎসব উদযাপন কমিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই ফুল বিজু শুধু একটি উৎসব নয়, বরং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আত্মার স্পর্শে জড়ানো এক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতি।

ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত পাহাড়ের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা, রঙ্গনসহ নানা জাতের ফুল হাতে করে আসে। নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে গাওয়া হয় প্রার্থনার মৃদু সুর। কেউ কেউ উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশেও প্রার্থনা করেন—মিলেমিশে এক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে ওঠে পুরো দৃশ্য।

এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হলো বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা। বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্র ২৯ তারিখে পালিত হয় ফুল বিজু, আর এর পরদিন চৈত্রসংক্রান্তি এবং তারপর পহেলা বৈশাখে পৌঁছায় উৎসবের চূড়ান্ত রূপ।

বৈসাবি উৎসব উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা সমীর চাকমা বলেন, “ফুল বিজু শুধু একটা উৎসব নয়, এটা আমাদের হৃদয়ের ভাষা। গঙ্গা দেবীর পূজার মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি—পুরনো দুঃখ, ক্লান্তি সব ভেসে যাবে, আর নতুন বছর আসবে আনন্দ আর শান্তির বার্তা নিয়ে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ওমর ফারুক বলেন, “এই উৎসব পাহাড়ি সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন। এতে সম্প্রীতি, ঐতিহ্য আর মানুষের আন্তরিকতা এক হয়ে যায়। আমরা চাই, এই সংস্কৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এগিয়ে যাক।”

ফুলে ভাসানো প্রার্থনায় শুধু একটি বছর নয়, বরং পাহাড়ের মানুষ যেন নতুন আশায় ভরে ওঠে প্রতিটি মুহূর্তে—এই কামনাই যেন ফুটে উঠল দীঘিনালার মাইনী নদীর স্রোতে।