
দীঘিনালা প্রতিনিধি : দূর্জয় বড়ুয়া,“দানই ধর্ম, ধর্মই মুক্তি”— এই মহান বাণীকে ধারণ করে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালী সর্বজনীন শালবন বৌদ্ধ বিহারে অনুষ্ঠিত হলো শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব ২০২৫।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর ২০২৫) সকালে বিহারের দায়ক-দায়িকাদের আয়োজনে এই মহাধর্মীয় অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো পূণ্যার্থী অংশ নেন। উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপী চলে দান, প্রার্থনা ও ধর্মীয় কর্মসূচি।
অনুষ্ঠানে ভক্তরা পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, পানীয় দান, বুদ্ধমূর্তি দান, চীবর দান ও কল্পতরু দানসহ নানাবিধ দানে অংশ নেন পূণ্যার্থীরা। পরে দেশ ও জাতির শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো, সভাপতি, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি ও অধ্যক্ষ, বোয়ালখালী দশবল রাজ বন বৌদ্ধ বিহার।
প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত উ পঞ্ঞ্ চকক মহাথেরো, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যক্ষ, খৈয়াখালী ধম্মবিজয়ারাম বিহার, রাউজান, চট্টগ্রাম।
বিশেষ ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত লোকামিত্র থের মহোদয়, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি ও অধ্যক্ষ, কামাকুছড়া ধাম্মাংকুর বৌদ্ধ বিহার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত জ্ঞাননন্দ মহাথেরো, সাধারণ সম্পাদক লোকমিত্র থেরো, তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ভদন্ত করুণা বংশ থেরো প্রমুখ।
উল্লেখ্য, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান ভক্তা বিশাখা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি, রং করা, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর প্রস্তুত করে দান করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দানপ্রথার ধারাবাহিকতায়ই প্রতিবছর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পূণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয় দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব।
দীঘিনালার বোয়ালখালী শালবন বৌদ্ধ বিহারে এবারের আয়োজনও ছিল সেই ঐতিহ্যেরই এক উজ্জ্বল প্রতিফলন — যেখানে দান, ধর্ম ও ভক্তির মিলন ঘটেছে এক অনন্য উৎসবের আবহে।