নতুন ব্রিজে অসহায় যাত্রীদের নিরব কান্না: দ্বিগুণ ভাড়া, নেই প্রশাসনের চোখ

অভি পাল

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় নেমে আসে যাত্রীদের দীর্ঘশ্বাস। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ামুখী অসংখ্য মানুষ কাজ শেষে ঘরে ফিরতে চান। কিন্তু বাস, সিএনজি চালকদের অমানবিক ভাড়া আদায়ের শিকার হয়ে তাদের চোখে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখের সামনে দিনের পর দিন এই দুর্ভোগ চললেও কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

শ্রমজীবী মানুষদের জন্য বৃহস্পতিবার রাত যেন এক আতঙ্কের নাম। অধিকাংশ অফিস-কারখানায় শুক্রবার ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীদের ঢল নামে। কিন্তু এই সুযোগকে পুঁজি করে যানবাহন চালকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করেন। যে ভাড়া দিনে ৫০ টাকা, রাত নামলেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০থেকে ১৫০ টাকা।

বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামে দিনমজুরির কাজ করতে আসা রহিম মিয়া কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “সকালে কাজ করে যা পেয়েছি, তার অর্ধেকই চলে গেল ভাড়ায়। পরিবারের জন্য কিছু নিয়ে যাব, সে উপায় রইলো না। প্রতিবাদ করলে চালকরা বলে, ‘ভাড়া দিতে না চাইলে নেমে যাও।’ আমরা গরিব মানুষ, কোথায় যাব?”

কেবল রহিম মিয়া নন, এমন অসংখ্য হতদরিদ্র যাত্রী প্রতিনিয়ত এই অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন। পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেও অনেকে পারেন না, কারণ দক্ষিণ চট্টগ্রামের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে রাতের বেলা বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে।

আনোয়ারা থেকে ফেরা গার্মেন্টস কর্মী সুমনা আক্তার জানান, “আমাদের আয়ে সংসার চলে কষ্টে। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়। এই টাকা মেয়ের পড়ার খরচ থেকে কাটতে হয়। তবু তো বাড়ি ফিরতেই হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তার প্রভাব থাকে সাময়িক। অভিযান শেষ হলেই আগের মতোই শুরু হয় যাত্রীদের শোষণ।

নতুন ব্রিজ এলাকায় তদারকির জন্য স্থায়ী নজরদারি পয়েন্ট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যাত্রীদের আশা, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের অসহায়ত্বের দিকে নজর দেবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

এই অন্যায় বন্ধ না হলে, এই সড়কে বৃহস্পতিবার রাতের কান্না থামবে না।