বোয়ালখালীতে ভয়া*বহ আ*গুন: ছাইয়ে পরিণত স্বপ্ন, পথে ব্যবসায়ীরা

দুর্জয় বড়ুয়া( প্রতিনিধি) 

রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে বোয়ালখালী বাজারে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেল। সবে রাত পেরিয়ে নতুন দিনের শুরু, অথচ বাজারজুড়ে তখন শুধু আগুনের লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দোকানিদের চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে ছাই হয়ে গেল তাঁদের স্বপ্ন, জীবনের সঞ্চয় আর কঠোর পরিশ্রমের ফল।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে বোয়ালখালী বাজারের তৃপ্তি হোটেল এলাকার একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাতাসের তোড়ে মুহূর্তেই আগুন আশপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কিছু বোঝার আগেই আগুনের গ্রাসে চলে যায় বাজারের একটি বড় অংশ।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বাবুছড়া ব্যাটালিয়ন ৭ (বিজিবি)-এর দুটি সেকশন। লে. কর্নেল মো. রেজাউল রহমান, পিএসসি-এর নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। দীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও তখন আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

বাজার পরিচালনা কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ১৬টি দোকান। কাঠ ব্যবসায়ী জাকির, সাইদ, ইসলাম, আবু বকর এবং ইসমাইলের দোকানগুলো পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। রাজীব মহাজন, সাধন ঘোষ এবং বিল্টন দে-র হার্ডওয়্যার দোকানগুলো আগুনে ধ্বংস হয়েছে।

মুদি দোকানদার সেলিম ও খোরশেদ, কাপড় ব্যবসায়ী সিরাজ ও আফছার, হোটেল মালিক ইউসুফ এবং কুলিং কর্নারের ব্যবসায়ী ছোটন মহাজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ছাই হয়ে গেছে। লেপ-তোশক ব্যবসায়ী বাচ্চুর দোকানও আগুনে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।

দোকান প্লটের মালিকরাও পড়েছেন বড় ক্ষতির মুখে। শাপলা সমিতির ৫টি, ওবাইদুলের ১টি, সেলিমের জমিদারের ১টি এবং কাশেম ও জসিমের ৯টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে।

ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের সূত্রপাতের কারণ অনুসন্ধান চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তবে ব্যবসায়ীদের চোখে এখনো জমে আছে হতাশার কুয়াশা। আগুন কেবল তাঁদের দোকান পুড়িয়ে দেয়নি, পুড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের স্বপ্নও। জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে তাঁরা এখন আশায় চেয়ে আছেন সরকারি সহযোগিতার দিকে।