
অভি পাল: ভোরের আলো ফোটার আগেই চন্দনাইশ পরিণত হয় এক সবুজ সাম্রাজ্যে। উপজেলার রৌশন হাট, কাঞ্চননগর বাজার এবং দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা যেন হয়ে ওঠে পেয়ারার রাজধানী। বিশেষ করে রৌশন হাটে কৃষকরা যখন ঝুড়ি ঝুড়ি পেয়ারা নিয়ে বসেন, তখন মনে হয় যেন সবুজ রত্নের পাহাড় তৈরি হয়েছে।
এখানে দাম নির্ভর করে মূলত আকারের ওপর। ছোট আকারের প্রতি শ পেয়ারা পাইকাররা কিনছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, মাঝারি আকারের দাম উঠছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত, আর সেরা মানের বড় পেয়ারার জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বা তারও বেশি। এই দামই হাত ঘুরে শহরের বাজারে পৌঁছাতে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
এক অভিজ্ঞ পাইকারের ভাষায়, “এটা বাজার নয়, এটা সবুজ ভাগ্যের এক উন্মত্ত স্রোত। এখানে চোখের পলক ফেলারও সময় নেই, এক মুহূর্তে সেরা মাল চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে যায়!”
এই সবুজ ঐশ্বর্যের পেছনে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা এক গৌরব। এখানকার কৃষকদের রক্তে মিশে আছে পেয়ারা চাষের শিল্প। এখানে মূলত কাঞ্চননগর এবং মুকুন্দপুরী—এই দুই জাতের পেয়ারার আধিপত্য, তবে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দেশজুড়ে কাঞ্চননগর জাতটিই বেশি পরিচিত।
কাঞ্চননগরের এক প্রবীণ চাষি বলেন, “শহরের হাইব্রিড পেয়ারা দেখতে চকচকে হতে পারে, কিন্তু তার কোনো আত্মা নেই। আমাদের এই পেয়ারার প্রতি কামড়ে আছে পাহাড়ের আশীর্বাদ আর আমাদের পূর্বপুরুষের ঘাম।” তবে এই গর্বের পেছনে লুকিয়ে আছে শঙ্কার কালো মেঘ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পাহাড় কাটা এবং সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে এই ‘সবুজ সোনা’ আজ হুমকির মুখে।
কিন্তু যেখানে শঙ্কা, সেখানেই সম্ভাবনা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, চন্দনাইশের এই পেয়ারা শুধু দেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকার জন্য জন্মায়নি। একে যদি জিআই (GI) পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিং করা যায়, তবে এটি হতে পারে বাহিরের দেশের বিলাসবহুল ফলের বাজারের এক নতুন তারকা। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক হিমাগার এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে এই এক পেয়ারাই বদলে দিতে পারে পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি।
তাই পরেরবার যখন এই পেয়ারা আপনার হাতে উঠবে, তখন জানবেন—আপনি শুধু ফল নয়, এক অপার সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ এবং চট্টগ্রামের মাটির স্পন্দনকে স্পর্শ করছেন।