
অভি পাল :শারদীয় আকাশের নিচে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন উৎসবের এক বিশাল ক্যানভাস। মহাষষ্ঠীতে কল্পারম্ভের মাধ্যমে দেবীর আবাহনের পর আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মহাসপ্তমীর সকালে শাস্ত্রীয় আচারে মুখরিত ছিল নগরের ২৯২টি পূজামণ্ডপ। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পূজার আবহ ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠছে এবারের আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ—বিষয়ভিত্তিক বা ‘থিম’ পূজা। ভক্তি আর শিল্পের এই অনবদ্য মেলবন্ধন দেখতে দুপুরের পর থেকেই মণ্ডপের পথে বাড়ছে উৎসুক মানুষের আনাগোনা।
এবারের পূজায় চট্টগ্রামের মণ্ডপগুলো যেন একে অপরের সাথে শৈল্পিকতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। পৌরাণিক ভবিষ্যদ্বাণীকে আশ্রয় করে হাজারী লেইন নির্মাণ করেছে ‘কল্কি’ থিমের মণ্ডপ, যা দর্শককে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ নালাপাড়া ‘ছৌ নৃত্যে লঙ্কাকাণ্ড’ থিমের মাধ্যমে রামায়ণের মহাকাব্যিক আখ্যানকে জীবন্ত করে তুলেছে। শুধু পৌরাণিক কাহিনীই নয়, রাঙ্গুনিয়ার ‘কৃষকের জীবনধারা’ থিমে দেবী দুর্গাকে কল্পনা করা হয়েছে বাংলার চিরচেনা কৃষকের ঘরের মেয়ে হিসেবে, যা এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তা বহন করছে। পাথরঘাটার ‘আড়াল’ কিংবা ফিরিঙ্গি বাজারের ‘দ্বারকা’-এর মতো থিমগুলোও দর্শনার্থীদের ভাবনার খোরাক জোগাচ্ছে।
সকালে নবপত্রিকা স্থাপন ও মহাস্নানের মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমীর মূল পূজা-অর্চনা সম্পন্ন হয়েছে। এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার এই সময়ে মণ্ডপগুলোতে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। নতুন পোশাকে সেজে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন দিনের আলোয় প্রতিমা ও প্যান্ডেলের কারুকার্য ভালোভাবে দেখার জন্য। যদিও থিম পূজার আসল রূপ ও আলোর ঝলকানি উন্মোচিত হবে সন্ধ্যার পর, কিন্তু দিনের বেলাতেই এই শিল্পকর্মগুলো উপভোগ করার জন্য মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।
উৎসবের এই ক্রমবর্ধমান উন্মাদনা মূলত সন্ধ্যাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। আয়োজকরা এখন সন্ধ্যার আরতি ও আলোকসজ্জার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই এই মণ্ডপমুখী জনস্রোত জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ভক্তি, শিল্প আর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে চট্টগ্রামের শারদোৎসব এক সার্বজনীন মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে, যার চূড়ান্ত রূপ দেখা যাবে আগামী দিনগুলোতে। উৎসবের এই স্রোত আগামীকাল মহাষ্টমীর কুমারী পূজাকে ঘিরে আরও বেগবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।